পরকীয়া: নিষিদ্ধ সম্পর্কের টানাপোড়ন


পরকীয়া—একটা সম্পর্ক, যেটা আমাদের সমাজে একেবারেই নিষিদ্ধ, তবুও তার অস্তিত্ব যেন চিরকালীন। ভালোবাসার এই গোপন টান অনেক সময় এতটাই প্রবল হয়ে ওঠে যে মানুষ সব কিছু ভুলে, সম্পর্কের বেড়াজাল ছিঁড়ে তার দিকে ছুটে যায়। কিন্তু কেন? কেন মানুষ ভালোবাসা থাকা সত্ত্বেও এই নিষিদ্ধ পথে পা বাড়ায়? 


আমার মনে হয়, প্রতিটি সম্পর্কেই এক সময় একঘেয়েমি চলে আসে। প্রথম দিকের রোমাঞ্চ, উত্তেজনা আস্তে আস্তে হারিয়ে যায়। তখন অনেক মানুষ নিজেকে একাকী মনে করে, অনুভব করে যে তার সঙ্গীর সাথে সেই পুরোনো ভালোবাসার টানটা আর নেই। এই শূন্যতা পূরণ করতে কেউ কেউ পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। নতুন মানুষ, নতুন অনুভূতি—এটাই তাদের আকর্ষণ করে।


পরকীয়া সম্পর্ক অনেকটাই নিষিদ্ধ ফলের মতো। যেটা পাওয়া যায় না, সেটা নিয়ে মানুষের কৌতূহল সবসময় বেশি। সেই নিষিদ্ধতাই হয়তো এই সম্পর্ককে আরও রোমাঞ্চকর করে তোলে। মানুষ অনুভব করে, সে এমন কিছু করছে যা সমাজের চোখে ভুল, কিন্তু তার কাছে তা নতুন এবং উত্তেজনাপূর্ণ। এটা যেন এক ধরনের গোপন আনন্দের উৎস। 


কিন্তু এই গোপন সম্পর্কের পেছনে অনেক কষ্ট লুকিয়ে থাকে। প্রথমে হয়তো খুব মধুর লাগে, কিন্তু ধীরে ধীরে তা জটিলতায় ভরে যায়। দুই পক্ষের কেউই আসলে সম্পূর্ণ শান্তি পায় না। একদিকে মিথ্যা, প্রতারণা—অন্যদিকে অপরাধবোধ। যাকে ভালোবাসা মনে করে মানুষ পরকীয়ায় জড়ায়, সেই ভালোবাসার আড়ালে অনেক সময় ক্ষণস্থায়ী আকর্ষণ থাকে। 


আমরা অনেক সময় দেখি, যারা পরকীয়ায় জড়ায়, তারা নিজেদের জীবনে হতাশ। হয়তো তাদের বর্তমান সম্পর্কটি আর সেই আগের মতো নেই। হয়তো তারা সঙ্গীর কাছ থেকে মানসিক সমর্থন পাচ্ছে না। কিন্তু প্রশ্ন হলো, পরকীয়া কি সত্যিই এই সমস্যার সমাধান? বেশিরভাগ সময় দেখা যায়, পরকীয়া সম্পর্কও একসময় ভেঙে যায়। কারণ এটা শুরুই হয়েছিল এক ধরনের মিথ্যার উপর। 


আবার, পরকীয়া শুধু শারীরিক সম্পর্কের ব্যাপার নয়, এটা মানসিকও হতে পারে। হয়তো একজন মানুষ কারো সাথে তার আবেগ ভাগাভাগি করছে, এমন কথা বলছে যা সে তার সঙ্গীর সাথে শেয়ার করতে পারে না। এমন মানসিক পরকীয়া অনেক সময় আরও গভীর হয়, কারণ এতে হৃদয়ের একটি অংশ জড়িয়ে থাকে। 


অবশেষে, পরকীয়া সম্পর্ক একটা পরিবারকে ভেঙে দিতে পারে, সম্পর্ককে চিরকালের জন্য বিষাক্ত করে তুলতে পারে। সমাজের চোখে এটা যতই নিষিদ্ধ হোক না কেন, এর পেছনের কারণগুলো গভীর। প্রত্যেকটা সম্পর্কই নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে যায়। আর সেই সমস্যাগুলো মেটানোর চেষ্টা না করে যদি কেউ অন্য পথ বেছে নেয়, তাহলে হয়তো সম্পর্কের শিকড়টাই দুর্বল হয়ে যায়।

Comments

Popular posts from this blog

মেয়েদের মাস্টারবেশন: স্বাভাবিক না খারাপ?

কেন মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়?

ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে পর্নোগ্রাফির খারাপ প্রভাব