কেন মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়?


আত্মহত্যা—একটা শব্দ, যেটা শুনলেই বুকের ভেতর এক ধরনের চাপা কষ্ট তৈরি হয়। আমরা যখন কোনো খবরের কাগজে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় আত্মহত্যার খবর দেখি, একটা প্রশ্ন খুব তাড়াতাড়ি মাথায় আসে—কেন? কেন একজন মানুষ এমন চরম সিদ্ধান্ত নেয়? জীবন তো এত সুন্দর! তাহলে কী এমন ঘটে যার জন্য কেউ মৃত্যুকেই বেছে নেয়?


আমার মনে হয়, একজন মানুষ যখন আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন সে চরম হতাশায় ডুবে থাকে। এই হতাশা হয়তো তার নিজের ভিতরেই তৈরি হয়, হয়তো পরিস্থিতি তাকে এমন জায়গায় নিয়ে গেছে যে সে আর কোনো আলো দেখতে পায় না। অনেক সময় আমরা বাইরে থেকে বুঝতেও পারি না কেউ কতটা ভেতরে ভেঙে পড়েছে। হাসির আড়ালেও গভীর বিষণ্নতা লুকিয়ে থাকতে পারে।


বেশিরভাগ মানুষই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় একান্ত নিঃসঙ্গ মুহূর্তে। তখন তার মনে হয়, কেউ তাকে বুঝছে না, কেউ তার পাশে নেই। এই নিঃসঙ্গতাটা যখন বেড়ে যায়, তখন মানুষ ভাবে, তার অস্তিত্বটাই যেন অর্থহীন। আর এই অর্থহীনতা তাকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। 


বাইরের পৃথিবীটা হয়তো তার জন্য অনেকটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সম্পর্কের ভাঙন, চাকরির চাপ, অর্থনৈতিক সমস্যা—সবকিছু মিলে তার মনে হয়, এ জীবন আর বয়ে নিয়ে চলা সম্ভব নয়। একেকজনের কাছে চাপের সংজ্ঞা একেকরকম। কেউ খুব সহজেই সামলে নিতে পারে, কেউ আবার ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ে। 


মানুষ যখন আত্মহত্যার কথা ভাবে, সে আসলে মুক্তি খোঁজে। জীবনের সেই সব যন্ত্রণা থেকে মুক্তি, যা তাকে প্রতিদিন তাড়িয়ে বেড়ায়। হয়তো সে ঘুমাতে পারে না, কাজ করতে পারে না, এমনকি প্রিয় মানুষদের সাথেও ঠিকমত কথা বলতে পারে না। তার কাছে তখন মৃত্যুই একমাত্র শান্তির পথ বলে মনে হয়। 


আবার, কিছু মানুষ হয়তো এতটাই বিষণ্ন হয়ে পড়ে যে তারা বুঝতে পারে না তারা কি করছে। একসময় তাদের মনে হয়, এই পৃথিবীতে তাদের আর দরকার নেই। তারা চলে গেলে কেউ তাদের জন্য কাঁদবে না। এই ভুল ভাবনা যখন মনের মধ্যে গেঁথে যায়, তখনই তারা এমন চরম পদক্ষেপ নেয়।


আমরা যারা এই সব খবর দেখি, আমাদের উচিত বুঝতে চেষ্টা করা যে মানুষটা কি কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিলো। তার মানসিক অবস্থাটা কেমন ছিল? হয়তো একটু বেশি সময়, একটু বেশি মনোযোগ, একটু বেশি ভালোবাসা দিলে তাকে বাঁচানো যেত। 


মানুষ কখনোই আসলে মরতে চায় না। সে শুধু তার কষ্ট থেকে মুক্তি চায়। আমরা যদি তার কষ্টটা বুঝতে পারতাম, যদি তাকে একটু আশ্রয় দিতে পারতাম, তাহলে হয়তো অনেক প্রাণই বাঁচানো যেত।


এই লেখা আত্মহত্যার পিছনের মানসিক যন্ত্রণা আর নিঃসঙ্গতার গল্প। যদি কখনো কারো মনে হয়, জীবনের ভার অসহনীয় হয়ে গেছে, তার সাথে কথা বলো। হয়তো তোমার কথা তার জীবন বদলে দিতে পারে।

Comments

Popular posts from this blog

মেয়েদের মাস্টারবেশন: স্বাভাবিক না খারাপ?

ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে পর্নোগ্রাফির খারাপ প্রভাব