অশান্তি ও সহনশীলতা: মাসিকের দিনগুলোর যন্ত্রণা
মাসিকের দিন এসে হাজির হলেই যেন এক অদ্ভুত অশান্তি শুরু হয়। সেই সময় শরীরের কোণে কোণে এক অজানা যন্ত্রণা। কখনও মনে হয়, পৃথিবীকে প্রতিটি আঘাত অনুভব হচ্ছে, কখনও মনে হয়, অন্তর থেকে যেন কোনো একটা কিছু ভেঙে পড়ছে। মাসিক ব্যথা—এটা যেন নারীজীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
আমি যখন ভাবি, তখন মনে হয়, মাসিকের এই দিনগুলো কেবলমাত্র শারীরিক অস্বস্তি নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে মন-মালিন্যের এক অন্যরকম গল্প। প্রতিটি তরুণী যখন এই যন্ত্রণার সম্মুখীন হন, তখন তিনি একদিকে শারীরিক যন্ত্রণায় কাতর হন, অন্যদিকে মনে হয়, যেন পুরো পৃথিবী তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আছে।
মাসিকের দিনগুলোতে নানা অনুভূতি আসে। কখনও বা মনে হয়, এই শরীরের সমস্ত শক্তি যেন মাটিতে গিয়ে পড়েছে। আর যে ব্যথা, সেটি যেন আর কখনও শেষ হবে না। খোঁজ নিয়ে দেখি, এই সমস্যা হাজার বছরের পুরনো। আমাদের দাদী-নানীরাও এ ব্যথার কাহিনী শুনিয়ে আমাদের চিন্তায় রেখেছেন।
কিন্তু, মাসিকের দিনগুলোতে কিভাবে এই যন্ত্রণা মোকাবিলা করা যায়? এর কিছু উপায় আছে। এক কাপ গরম চা, নাকি এক টুকরো চকোলেট, এসবের মধ্যে যেন কিছুটা শান্তি খুঁজে পাওয়া যায়। আবার কখনও একটু বিশ্রাম, আর শরীরের আরামদায়ক অবস্থান নেয়া—এসবেও মনে হয়, যন্ত্রণা কিছুটা কমে যায়।
মাসিকের সময় আমাদের মানসিক অবস্থাও পরিবর্তিত হয়। কখনও কখনও চোখের কোণে জল চলে আসে, কখনও মনে হয়, দুনিয়া বড় অদ্ভুত। সেই সময়টাতে একটু সমর্থন, একটু ভালোবাসা, এবং একটু মিষ্টি কথা খুব প্রয়োজন। সঙ্গী বা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এই অনুভূতি ভাগ করে নেয়ার দরকার।
বলার অপেক্ষা রাখে না, মাসিকের ব্যথা আসলে আমাদের শরীরেরই একটি প্রক্রিয়া। আর এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে আমাদের শেখার প্রক্রিয়া। ধীরে ধীরে, আমরা শিখি কীভাবে এই যন্ত্রণাকে মেনে নিতে হয়, কীভাবে এই সময়টাতে নিজেদের যত্ন নিতে হয়।
মাসিকের ব্যথা একটি অস্থায়ী জাগতিক বাস্তবতা। হয়তো কিছু সময়ের জন্য এটি আমাদের কষ্ট দেয়, কিন্তু শেষে আমরা সব কিছু কাটিয়ে ওঠে উঠে দাঁড়াই। সেই সময়টাতে আমাদের শক্তি আর সাহসের পরিচয় হয়।
এভাবেই, মাসিকের এই দিনগুলো আমাদের নারীসত্ত্বার একটি গোপন কবিতা। প্রতিটি অশান্তির পেছনে লুকিয়ে আছে আমাদের জীবনের গল্প, যে গল্পগুলো একদিন হাসি-খুশিতে পরিণত হবে।
Comments
Post a Comment